শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাবের তাৎপর্য

 

হরিচাঁদ ঠাকুর হিন্দুধর্মীয় সাধক ও মতুয়া সম্প্রদায়ের গুরু। ১২১৮ বঙ্গাব্দের (১৮১১ খ্রি.) ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষীয় ত্রয়োদশী তিথিতে গোপালগঞ্জ (বৃহত্তর ফরিদপুর) জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে এই আবির্ভাব উৎসব পালিত হয়।

তাঁর পিতা যশোমন্ত ঠাকুর ছিলেন একজন মৈথলি ব্রাহ্মণ এবং নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব। হরিচাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল খুবই সামান্য। পাঠশালা অতিক্রম করে তিনি মাত্র কয়েক মাস স্কুলে গিয়েছিলেন। পরে স্কুলের গন্ডিবদ্ধ জীবন ভালো না লাগায় স্কুল ত্যাগ করে তিনি মিশে যান সাধারণ মানুষের সঙ্গে। প্রকৃতির আকর্ষণে তিনি রাখাল বালকদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। তখন থেকেই তাঁর মধ্যে এক স্বতন্ত্র ভাবের প্রকাশ ঘটে। দৈহিক সৌন্দর্য, স্বভাব -সারল্য, সঙ্গীতপ্রিয়তা এবং পরোপকারী মনোভাবের কারণে তিনি বন্ধুদের নিকট খুবই প্রিয় ছিলেন। তিনি ভালো ভজন গাইতে পারতেন। হরিচাঁদ বাল্যকাল থেকেই ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির; বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। তাঁর আধ্যাত্মিক মহিমা সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তি আছে। এমনও বলা হয় যে, তিনি আধ্যাত্মিক শক্তিবলে মানুষের রোগমুক্তি ঘটাতে পারতেন। তিনি চৈতন্যদেবের প্রেম-ভক্তির কথা সহজ-সরলভাবে প্রচার করতেন। তাঁর এই সাধন পদ্ধতিকে বলা হয় ‘মতুয়াবাদ’ আর এই আদর্শে যারা বিশ্বাসী তাদের বলা হয় ‘মতুয়া’।

মতুয়াবাদ সত্য,প্রেম ও পবিত্রতা এই তিনটি মূল স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ মতবাদে সকল মানুষ সমান; জাতিভেদ বা সম্প্রদায়ভেদ মতুয়াবাদে স্বীকৃত নয়। হরিচাঁদ নিজে ব্রাহ্মণ-সন্তান হয়েও সমাজের নিম্নস্তরের লোকদেরই বেশি করে কাছে টেনেছেন; তাদের যথার্থ সামাজিক মর্যাদা দিয়েছেন। তাই দেখা যায়, তাঁর শিষ্যেদের সিংহভাগই সমাজের নিম্নশ্রেণির লোক। তারা তাঁকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করে। হরিচাঁদ সন্ন্যাস-জীবনে বিশ্বাসী ছিলেন না; তিনি ছিলেন সংসারী এবং সংসারধর্ম পালন করেই ঈশ্বরপ্রেমের বাণী প্রচার করেছেন। তাঁর ধর্ম সাধনার মূল কথা হলো: “গৃহেতে থাকিয়া যার হয় ভাবোদয়।/সেই যে পরম সাধু জানিও নিশ্চয়।” তিনি এদেশের অবহেলিত সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ এবং সনাতন ধর্মে একনিষ্ঠ থাকার প্রেরণা জুগিয়েছেন।

হরিচাঁদ ১২৮৪ বঙ্গাব্দের (১৮৭৭) ২৩ ফাল্গুন বুধবার ইহলীলা সংবরণ করেন। তাঁর জীবন ও আদর্শ নিয়ে কবিয়াল তারকচন্দ্র সরকার শ্রী শ্রী হরিলীলামৃত গ্রন্থ রচনা করেন। ঠাকুরের জন্মতিথি উপলক্ষে প্রতি বছর ওড়াকান্দিতে দেশ-বিদেশের মতুয়ারা সম্মিলিত হন এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

Related Blogs

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *